ঢাকা ১২:৪৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ :
Logo বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের, ছি ছি হাসিনা লজ্জায় পালাইছে Logo চাঁপাইনববাগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ থানাধীন পরিত্যক্ত অবস্থায় ৩৫৩ বোতল ফেন্সিডিল উদ্ধার। Logo ক্ষমতার দাপটে কৃষিমন্ত্রী সরকারি ভূমি বাইক্কাবিল এর পাড় কেটে নিজ ফিসারিতে মাটি ভরাট Logo পরিত্যক্ত অবস্থায় ১৩৮ বোতল ফেন্সিডিল, ৯৩০ গ্রাম হেরোইন এবং বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার। Logo শ্রীনগরে সাংবাদিক তারিকুল ইসলাম এর উপর সন্ত্রাসী হামলা  Logo সাংবাদিকদের সাথে জিএমপি নতুন কমিশনারের মতবিনিময় Logo মুরাদনগর উপজেলায় কর্মরত সাংবাদিকদের সাথে বিএনপির মতবিনিময়। Logo ট্রেনের যাত্রা বিরতির জন্য, রাজেন্দ্রপুর স্টেশনে কম্পিউটার ট্রেন আটকে মানববন্ধন Logo মৌলভীবাজারে আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস পালিত Logo মৌলভীবাজারে নতুন পুলিশ সুপারের যোগদান

মৌলভীবাজারের সরকারি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (টিটিসি) ‘ড্রাইভিং উইথ অটোমেকানিক্স কোর্সসহ ব্যাপক দুর্নীতি ও নানা ধরণের অনিয়মের অভিযোগ

মনজু বিজয় চৌধুরী॥ মৌলভীবাজার প্রতিনিধি॥
  • আপডেট সময় : ১১:২৮:০৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২১ বার পড়া হয়েছে

মৌলভীবাজারের সরকারি কারিগরিৃ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (টিটিসি) ‘ড্রাইভিং উইথ অটোমেকানিক্স কোর্সসহ বিভিন্ন ট্রেডে বছরের পর বছর নানা দুর্নীতি ও নানা অনিয়মের মাধ্যমে বেকার প্রশিক্ষণার্থীদের কাছ থেকে অর্থ লোপাট করে নিজেদের আখের গোছানোর অভিযোগ ওঠেছে প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ আকতার হোসেন ও কোর্স ইন্সট্রাক্টর মোহাম্মদ আবু ইউসুফ ইমন ও অন্যান্য কর্মকর্তা কর্মচারীর বিরুদ্ধে।
জানা যায়, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২১ থেকে ৪৫ বছর বয়সীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করে দেশে ও বিদেশে চাকরির সুযোগ করে দেয়ার লক্ষ্যে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) কর্তৃক পরিচালিত মৌলভীবাজারের কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে নানা কোর্সে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে।
কোর্সে নানা ধরণের দুর্নীতি এবং অনিয়ম হলেও প্রশিক্ষণে থাকা অবস্থায় মুখ খুলে কথা বলার সাহস পায়নি অনেক ভুক্তভোগী প্রশিক্ষণার্থীরা। ড্রাইভিং উইথ অটোমেকানিক্স কোর্সের জুলাই-ডিসেম্বর ২০২৩ এর দুইটি ব্যাচ এবং জানুয়ারি-মার্চ ২০২৪ ব্যাচের সকল প্রশিক্ষনার্থীদের ‘ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য মেডিকেল সার্টিফিকেট’ ফরম-২ এ দেখা যায় এতে ‘ডাঃ চন্দ্র শেখর কর, মেডিকেল অফিসার’ এ নাম ও পরিচয়ে দুই লাইনের একটি সিল মারা ছিল। তার নিচে হাতে লেখা রেজিষ্ট্রেশন নং অ-৭৫২৩৪ আর সিলের উপরে একটি স্বাক্ষর রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে টিটিসির সরকারি প্রশিক্ষণের ড্রাইভিং এর গাড়ি নিয়ে শ্রীমঙ্গলের বিভিন্ন পর্যটন স্পটসহ মৌলভীবাজার শহরে ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করার অভিযোগও রয়েছে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে।
ড্রাইভিং উইথ অটোমেকানিক্স কোর্সের অষ্টম ব্যাচ (জুলাই-সেপ্টেম্বর-২০২৩) এর প্রশিক্ষণার্থী তৌফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ ও ভাতা পাবার কথা শুনে যখন মৌলভীবাজার কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ড্রাইভিং উইথ অটোমেকানিক্স কোর্সে ভর্তি হই তখন ভর্তি বিজ্ঞপ্তির নোটিশে ৬০ টাকা লেখা থাকলেও আমাদের কাছ থেকে ১০০ টাকা করে আদায় করা হয়েছে। ভর্তির পর লার্ণার লাইসেন্স ফি বাবদ আমাদের কাছ থেকে আদায় করা হয় ৮০০ টাকা। অথচ লার্ণার ফি প্রদানের পর আমাদের মুঠোফোনে ৫২৫ টাকার এসএমএস আসে। অর্থাৎ ৫২৫ টাকার ফি নেয়া হয়েছে ৮০০ টাকা করে। এছাড়া ডোপ টেস্ট ও আইটেস্ট করানোর জন্য ২০০ টাকা করে ৪০০ টাকা। ক্লাস এবং পরীক্ষার কথা বলে ২০০ টাকা দিয়ে একটি স্পাইরাল বাইন্ডিং করা বই আমাদের কিনতে বাধ্য করা হয়। কিন্তু বই কেনার পর আর কোনো ক্লাস হয়নি।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে বছরের পর বছর ধরে প্রশিক্ষণার্থীদের কাছ থেকে নানা অজুহাতে অর্থ আদায়, চিকিৎসকের ভুয়া সিল বানিয়ে ভুয়া রেজিষ্ট্রেশন নম্বর দিয়ে জাল স্বাক্ষর করারও অভিযোগ রয়েছে কোর্সের ইন্সট্রাক্টর মোহাম্মদ আবু ইউসুফ ইমন ও অন্যান্য কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। প্রতি বছর তিন মাস অন্তর অন্তর বছরে চারটি গ্রুপে ৩২০ জন (প্রতি গ্রুপে সকালের ব্যাচে ৪০ জন ও বিকেলের ব্যাচে ৪০ জন করে) বেকার যুবক-যুবতীকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়।
বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিলে খোঁজ নিয়ে এ রেজিষ্ট্রেশন নম্বর ও চিকিৎসকের কোন অস্থিত্ব পাওয়া যায়নি। এছাড়া ওই চিকিৎসক ভুয়া ও তার সিল জালিয়াতির কথা স্বীকার করেন কোর্সের ইন্সট্রাক্টর মোহাম্মদ আবু ইউসুফ ইমন।
প্রশিক্ষণার্থীরা অভিযোগ করেন ‘ড্রাইভিং উইথ অটোমেকানিক্স কোর্সে’ নামমাত্র প্রশিক্ষণ করানো হয়। কোর্স ইন্সট্রাক্টর, প্রশিক্ষক ও কর্মকর্তাদের ফাঁকিবাজি এবং অনিয়মের কারণে প্রকৃত প্রশিক্ষণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা।
ড্রাইভিং উইথ অটোমেকানিক্স কোর্সের নবম ব্যাচ (জানুয়ারি-মার্চ-২০২৪) এর প্রশিক্ষণার্থী আবদুল হাকিম এবং নবম ব্যাচের (অক্টোবর-ডিসেম্বর-‘২৩) প্রশিক্ষণার্থী আব্দুর রাজ্জাক বলেন আমাদের ব্যাচের সবার কাছ থেকেও ভর্তির পর লার্ণার লাইসেন্স ফি বাবদ আদায় করা হয় ৮০০ টাকা। অথচ লার্ণার ফি প্রদানের পর আমাদের মুঠোফোনে ৫২৫ টাকার এসএমএস আসে। অর্থাৎ ৫২৫ টাকার ফি নেয়া হয়েছে ৮০০ টাকা করে। এছাড়া ডোপ টেস্ট ও আইটেস্ট করানোর জন্য ২০০ টাকা করে ৪০০ টাকা। ক্লাস এবং পরীক্ষার কথা বলে ২০০ টাকা দিয়ে একটি স্পাইরাল বাইন্ডিং করা বই আমাদের কিনতে বাধ্য করা হয়। কিন্তু বই কেনার পর আর কোনো ক্লাস হয়নি। কোর্সের শেষদিকে বিআরটিএ অফিসের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ করিয়ে দেবার কথা বলে আরো ২ হাজার ৫০০ টাকা নেয়া হয়েছে।
সরকারি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ড্রাইভিং উইথ অটোমেকানিক্স কোর্সের অষ্টম ব্যাচ (জুলাই-সেপ্টেম্বর-২০২৩) এর প্রশিক্ষণার্থী আশিকুর রহমান চৌধুরীর বলেন, আমরা ২০২৩ সালে ড্রাইভিং কোর্স সমাপ্ত করি। ২০২৪ সালের আগস্ট মাসও শেষ, কিন্তু এখন পর্যন্ত আমি লাইসেন্স ফি’র ৩ হাজার ২৯০ টাকা পাইনি। তবে যাতায়াত ফি বাবত ছয় হাজার দুইশত টাকা পেয়েছি।
একই অভিযোগ করেন প্রশিক্ষণার্থী আশিকুর রহমান চৌধুরী, মো. নাইম মিয়া, আনোয়ার হোসেন, হাবিবুর রহমান বিল্লাল, জুনেদ মিয়া, অনিক বর্ধন, চয়ন রবি দাস, আব্দুল ওয়াদুদ ফাহাদ এবং নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরও কয়েকজন প্রশিক্ষণার্থী।
মৌলভীবাজারের কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ড্রাইভিং উইথ অটোমেকানিক্স কোর্সের ইন্সট্রাক্টর মোহাম্মদ আবু ইউসুফ ইমন বলেন, ‘লার্ণারের কাজ বাইরে থেকে করাই তাই তাদের কিছু খরচপাতি দিতে হয়। স্কেনিং-টেস্কিং আছে, অনলাইন চার্জ আছে। সেজন্য প্রশিক্ষণার্থীদের কাছ থেকে ৫২৫ টাকার ফি ৮০০ টাকা করে নেই। আমরা কোন টাকা রাখি না। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)-কে শিক্ষার্থী প্রতি ২ হাজার ৫০০ টাকা করে দিতে হয় প্রশিক্ষণার্থীদের পাশের জন্য।
অষ্টম ব্যাচের ২৬ জনের বরাদ্দ ৮৫ হাজার ৫৪০ টাকা এসেছে, বাকিদের বরাদ্দ এখনো আসেনি, প্রসেসিং চলছে, আসামাত্রই বাকি প্রশিক্ষণার্থীদের টাকা দেওয়া হবে।
মৌলভীবাজার কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অধ্যক্ষ মো. আকতার হুসেন বলেন, ‘প্রশিক্ষণার্থীদের উত্থাপিত সকল অভিযোগ সঠিক নয়। আমি এখানে আসার আগে মৌলভীবাজার টিটিসি জঙ্গলে পরিপূর্ণ ছিল। আমি এটিকে কার্যক্রমের আওতায় নিয়ে এসেছি।’ গিয়ে তার কোথাও কোন ভুল হচ্ছে কিনা তা খতিয়ে দেখবো। যুগ যুগ ধরে সমাজে যা চলে এসেছে তা পাল্টানো যাবে না। আপনি পারবেন কি সমাজ পাল্টাতে?
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) মৌলভীবাজার কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (ইঞ্জি.) মু. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমাদের নামে তারা টাকা নিচ্ছে তা কি কারো বক্তব্য বা লিখিত আছে? থাকলে আমাদের দেন। আর ড্রাইভিং পরীক্ষা আমরা কঠিনভাবে নিচ্ছি।
আমি অভিযোগের ব্যাপারে টিটিসি প্রিন্সিপাল সাহেবের সাথে আলোচনা করে দেখছি। আমরা টিটিসির বাচ্চাদের সবকিছু ফ্রি করাচ্ছি, ভাতা দিচ্ছি। তারা যদি ভালো করে ড্রাইভিং নাই শেখায় তবে তা দুঃখজনক।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

মৌলভীবাজারের সরকারি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (টিটিসি) ‘ড্রাইভিং উইথ অটোমেকানিক্স কোর্সসহ ব্যাপক দুর্নীতি ও নানা ধরণের অনিয়মের অভিযোগ

আপডেট সময় : ১১:২৮:০৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪

মৌলভীবাজারের সরকারি কারিগরিৃ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (টিটিসি) ‘ড্রাইভিং উইথ অটোমেকানিক্স কোর্সসহ বিভিন্ন ট্রেডে বছরের পর বছর নানা দুর্নীতি ও নানা অনিয়মের মাধ্যমে বেকার প্রশিক্ষণার্থীদের কাছ থেকে অর্থ লোপাট করে নিজেদের আখের গোছানোর অভিযোগ ওঠেছে প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ আকতার হোসেন ও কোর্স ইন্সট্রাক্টর মোহাম্মদ আবু ইউসুফ ইমন ও অন্যান্য কর্মকর্তা কর্মচারীর বিরুদ্ধে।
জানা যায়, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২১ থেকে ৪৫ বছর বয়সীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করে দেশে ও বিদেশে চাকরির সুযোগ করে দেয়ার লক্ষ্যে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) কর্তৃক পরিচালিত মৌলভীবাজারের কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে নানা কোর্সে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে।
কোর্সে নানা ধরণের দুর্নীতি এবং অনিয়ম হলেও প্রশিক্ষণে থাকা অবস্থায় মুখ খুলে কথা বলার সাহস পায়নি অনেক ভুক্তভোগী প্রশিক্ষণার্থীরা। ড্রাইভিং উইথ অটোমেকানিক্স কোর্সের জুলাই-ডিসেম্বর ২০২৩ এর দুইটি ব্যাচ এবং জানুয়ারি-মার্চ ২০২৪ ব্যাচের সকল প্রশিক্ষনার্থীদের ‘ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য মেডিকেল সার্টিফিকেট’ ফরম-২ এ দেখা যায় এতে ‘ডাঃ চন্দ্র শেখর কর, মেডিকেল অফিসার’ এ নাম ও পরিচয়ে দুই লাইনের একটি সিল মারা ছিল। তার নিচে হাতে লেখা রেজিষ্ট্রেশন নং অ-৭৫২৩৪ আর সিলের উপরে একটি স্বাক্ষর রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে টিটিসির সরকারি প্রশিক্ষণের ড্রাইভিং এর গাড়ি নিয়ে শ্রীমঙ্গলের বিভিন্ন পর্যটন স্পটসহ মৌলভীবাজার শহরে ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করার অভিযোগও রয়েছে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে।
ড্রাইভিং উইথ অটোমেকানিক্স কোর্সের অষ্টম ব্যাচ (জুলাই-সেপ্টেম্বর-২০২৩) এর প্রশিক্ষণার্থী তৌফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ ও ভাতা পাবার কথা শুনে যখন মৌলভীবাজার কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ড্রাইভিং উইথ অটোমেকানিক্স কোর্সে ভর্তি হই তখন ভর্তি বিজ্ঞপ্তির নোটিশে ৬০ টাকা লেখা থাকলেও আমাদের কাছ থেকে ১০০ টাকা করে আদায় করা হয়েছে। ভর্তির পর লার্ণার লাইসেন্স ফি বাবদ আমাদের কাছ থেকে আদায় করা হয় ৮০০ টাকা। অথচ লার্ণার ফি প্রদানের পর আমাদের মুঠোফোনে ৫২৫ টাকার এসএমএস আসে। অর্থাৎ ৫২৫ টাকার ফি নেয়া হয়েছে ৮০০ টাকা করে। এছাড়া ডোপ টেস্ট ও আইটেস্ট করানোর জন্য ২০০ টাকা করে ৪০০ টাকা। ক্লাস এবং পরীক্ষার কথা বলে ২০০ টাকা দিয়ে একটি স্পাইরাল বাইন্ডিং করা বই আমাদের কিনতে বাধ্য করা হয়। কিন্তু বই কেনার পর আর কোনো ক্লাস হয়নি।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে বছরের পর বছর ধরে প্রশিক্ষণার্থীদের কাছ থেকে নানা অজুহাতে অর্থ আদায়, চিকিৎসকের ভুয়া সিল বানিয়ে ভুয়া রেজিষ্ট্রেশন নম্বর দিয়ে জাল স্বাক্ষর করারও অভিযোগ রয়েছে কোর্সের ইন্সট্রাক্টর মোহাম্মদ আবু ইউসুফ ইমন ও অন্যান্য কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। প্রতি বছর তিন মাস অন্তর অন্তর বছরে চারটি গ্রুপে ৩২০ জন (প্রতি গ্রুপে সকালের ব্যাচে ৪০ জন ও বিকেলের ব্যাচে ৪০ জন করে) বেকার যুবক-যুবতীকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়।
বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিলে খোঁজ নিয়ে এ রেজিষ্ট্রেশন নম্বর ও চিকিৎসকের কোন অস্থিত্ব পাওয়া যায়নি। এছাড়া ওই চিকিৎসক ভুয়া ও তার সিল জালিয়াতির কথা স্বীকার করেন কোর্সের ইন্সট্রাক্টর মোহাম্মদ আবু ইউসুফ ইমন।
প্রশিক্ষণার্থীরা অভিযোগ করেন ‘ড্রাইভিং উইথ অটোমেকানিক্স কোর্সে’ নামমাত্র প্রশিক্ষণ করানো হয়। কোর্স ইন্সট্রাক্টর, প্রশিক্ষক ও কর্মকর্তাদের ফাঁকিবাজি এবং অনিয়মের কারণে প্রকৃত প্রশিক্ষণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা।
ড্রাইভিং উইথ অটোমেকানিক্স কোর্সের নবম ব্যাচ (জানুয়ারি-মার্চ-২০২৪) এর প্রশিক্ষণার্থী আবদুল হাকিম এবং নবম ব্যাচের (অক্টোবর-ডিসেম্বর-‘২৩) প্রশিক্ষণার্থী আব্দুর রাজ্জাক বলেন আমাদের ব্যাচের সবার কাছ থেকেও ভর্তির পর লার্ণার লাইসেন্স ফি বাবদ আদায় করা হয় ৮০০ টাকা। অথচ লার্ণার ফি প্রদানের পর আমাদের মুঠোফোনে ৫২৫ টাকার এসএমএস আসে। অর্থাৎ ৫২৫ টাকার ফি নেয়া হয়েছে ৮০০ টাকা করে। এছাড়া ডোপ টেস্ট ও আইটেস্ট করানোর জন্য ২০০ টাকা করে ৪০০ টাকা। ক্লাস এবং পরীক্ষার কথা বলে ২০০ টাকা দিয়ে একটি স্পাইরাল বাইন্ডিং করা বই আমাদের কিনতে বাধ্য করা হয়। কিন্তু বই কেনার পর আর কোনো ক্লাস হয়নি। কোর্সের শেষদিকে বিআরটিএ অফিসের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ করিয়ে দেবার কথা বলে আরো ২ হাজার ৫০০ টাকা নেয়া হয়েছে।
সরকারি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ড্রাইভিং উইথ অটোমেকানিক্স কোর্সের অষ্টম ব্যাচ (জুলাই-সেপ্টেম্বর-২০২৩) এর প্রশিক্ষণার্থী আশিকুর রহমান চৌধুরীর বলেন, আমরা ২০২৩ সালে ড্রাইভিং কোর্স সমাপ্ত করি। ২০২৪ সালের আগস্ট মাসও শেষ, কিন্তু এখন পর্যন্ত আমি লাইসেন্স ফি’র ৩ হাজার ২৯০ টাকা পাইনি। তবে যাতায়াত ফি বাবত ছয় হাজার দুইশত টাকা পেয়েছি।
একই অভিযোগ করেন প্রশিক্ষণার্থী আশিকুর রহমান চৌধুরী, মো. নাইম মিয়া, আনোয়ার হোসেন, হাবিবুর রহমান বিল্লাল, জুনেদ মিয়া, অনিক বর্ধন, চয়ন রবি দাস, আব্দুল ওয়াদুদ ফাহাদ এবং নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরও কয়েকজন প্রশিক্ষণার্থী।
মৌলভীবাজারের কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ড্রাইভিং উইথ অটোমেকানিক্স কোর্সের ইন্সট্রাক্টর মোহাম্মদ আবু ইউসুফ ইমন বলেন, ‘লার্ণারের কাজ বাইরে থেকে করাই তাই তাদের কিছু খরচপাতি দিতে হয়। স্কেনিং-টেস্কিং আছে, অনলাইন চার্জ আছে। সেজন্য প্রশিক্ষণার্থীদের কাছ থেকে ৫২৫ টাকার ফি ৮০০ টাকা করে নেই। আমরা কোন টাকা রাখি না। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)-কে শিক্ষার্থী প্রতি ২ হাজার ৫০০ টাকা করে দিতে হয় প্রশিক্ষণার্থীদের পাশের জন্য।
অষ্টম ব্যাচের ২৬ জনের বরাদ্দ ৮৫ হাজার ৫৪০ টাকা এসেছে, বাকিদের বরাদ্দ এখনো আসেনি, প্রসেসিং চলছে, আসামাত্রই বাকি প্রশিক্ষণার্থীদের টাকা দেওয়া হবে।
মৌলভীবাজার কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অধ্যক্ষ মো. আকতার হুসেন বলেন, ‘প্রশিক্ষণার্থীদের উত্থাপিত সকল অভিযোগ সঠিক নয়। আমি এখানে আসার আগে মৌলভীবাজার টিটিসি জঙ্গলে পরিপূর্ণ ছিল। আমি এটিকে কার্যক্রমের আওতায় নিয়ে এসেছি।’ গিয়ে তার কোথাও কোন ভুল হচ্ছে কিনা তা খতিয়ে দেখবো। যুগ যুগ ধরে সমাজে যা চলে এসেছে তা পাল্টানো যাবে না। আপনি পারবেন কি সমাজ পাল্টাতে?
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) মৌলভীবাজার কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (ইঞ্জি.) মু. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমাদের নামে তারা টাকা নিচ্ছে তা কি কারো বক্তব্য বা লিখিত আছে? থাকলে আমাদের দেন। আর ড্রাইভিং পরীক্ষা আমরা কঠিনভাবে নিচ্ছি।
আমি অভিযোগের ব্যাপারে টিটিসি প্রিন্সিপাল সাহেবের সাথে আলোচনা করে দেখছি। আমরা টিটিসির বাচ্চাদের সবকিছু ফ্রি করাচ্ছি, ভাতা দিচ্ছি। তারা যদি ভালো করে ড্রাইভিং নাই শেখায় তবে তা দুঃখজনক।