ঢাকা ১০:৪৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ :
Logo বিজয়া দশমীতে বাংলাদেশ তথ্য ও মানবাধিকার ফাউন্ডেশন কর্তৃক সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য শুভেচ্ছা বার্তা Logo এবারের দুর্গাপূজায় প্রায় দ্বিগুণ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা Logo আসল মাস্টারমাইন্ড জয় হলে আশ্চর্যের কিছুই থাকবে না’ Logo গ্লোরিয়াসের বার্ষিক ক্রিড়া পুরস্কার ও কৃতি শিক্ষার্থী সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত Logo নবনির্বাচিত চাঁদগাও থানা শ্রমিক দলের ৫১সদস্য বিশিষ্ট কমিটি অনুমোদন। Logo মাদক সরবরাহকালে ০৯ বোতল ফেন্সিডিল সহ ০১ জন গ্রেফতার। Logo আশার আলো মানবিক ফাউন্ডেশনের অনুষ্ঠান সম্পন্ন। Logo এলপি গ্যাসের দাম বৃদ্ধি নিয়ে যা বললেন উপদেষ্টা Logo নোয়াখালীতে বন্যয় ক্ষতিগ্রস্হদের পুনর্বাসনে এম.টি হক ফাউন্ডেশন নগদ অর্থ বিতরণ Logo চন্দনাইশে ডা. শাহাদাতকে মেয়র ঘোষণা করায় শোকরানা সভা ও খাবার বিতরণ

চট্টগ্রামে  লোকাল রোড়ে বন্ধ হয়ে গেল শতকোটি টাকার লোকাল ডেমু ট্রেন 

আকতার হোসেন শাকিল চট্টগ্রাম অফিস
  • আপডেট সময় : ১১:৪২:১৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ৬৪ বার পড়া হয়েছে

 

চট্টগ্রাম–দোহাজারী রুটে লোকাল দুই জোড়া ডেমো ট্রেন অবশেষে বন্ধ হয়ে গেল। এর আগে এ ট্রেনটি ইন্জিন সংকটের অজুহাতে সাড়ে তিন বছর বন্ধ ছিল।একই ভাবে বন্ধ হয়ে গেছে পটিয়া রুটে চলাচলরত ডেমু ট্রেনটিও। এই দুটি ট্রেন আর চলবে না বলে জানিয়েছে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ৫ এপ্রিল থেকে চট্টগ্রাম–দোহাজারী রুটে চলাচলকারী ২ জোড়া যাত্রীবাহী লোকাল ট্রেন বন্ধ হয়। রুটে যাত্রীদের ব্যাপক চাহিদা থাকার পরও প্রথমে ইঞ্জিন সংকটের কারণে লোকাল ট্রেনটি ২০২১ সালের ৫ এপ্রিল বন্ধ করে দেয়া হয়। সাড়ে ৩ বছরের মাথায় এসে ট্রেনটি একেবরেই বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এখন থেকে চট্টগ্রাম–দোহাজারী রুটে আর কোনো লোকাল ট্রেন চলবে না।

অপরদিকে চট্টগ্রাম–পটিয়া রুটের ডেমু ট্রেনটিও একেবারেই বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এখন এই রুটের যাত্রীরা চট্টগ্রাম–কক্সবাজার স্পেশাল ট্রেনে করে যাতায়াত করবে বলে জানান রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের পরিবহন বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। চট্টগ্রাম–কক্সবাজার স্পেশাল ট্রেনটি চট্টগ্রামের পর থেকে প্রতিটি স্টেশনে থামে এবং যাত্রী ওঠা–নামা করা হয়। এই ব্যাপারে রেলওয়ের চট্টগ্রাম স্টেশনের ম্যানেজার মো. মনিরুজ্জামান বলেন, দোহাজারী রুটে আগে একটি লোকাল ট্রেন চলাচল করতো। ট্রেনটি চট্টগ্রাম থেকে সন্ধ্যায় দোহাজারীর উদ্দেশ্যে ছেড়ে যেত এবং পরের দিন সকালে চট্টগ্রাম আসত। একইভাবে পটিয়া রুটে একটি ডেমু ট্রেন চলত। অনেক দিন দোহাজারী লোকাল ট্রেন এবং পটিয়া পর্যন্ত ডেমু ট্রেনটি বন্ধ আছে। দোহাজারী লোকাল ট্রেন আর চলবে না। ডেমুও আর চলবে না।

চট্টগ্রাম–দোহাজারী রুটের বেশ কয়েকজন যাত্রী বলেন, দোহাজারী থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত ১২টি স্টেশনের অন্তত ১০ হাজার যাত্রী রেল সেবা থেকে বঞ্চিত রয়েছে। ২০২১ সালের ৫ এপ্রিল থেকে এ ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এখন শুনছি একেবারেই বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এটা দুঃখজনক।

দোহাজারী রুটের ট্রেনের যাত্রী চন্দনাইশের মাস্টার নুরুল আলম বলেন, চট্টগ্রাম–দোহাজারী রুটে লোকাল ট্রেনটি বন্ধ করে দেয়ায় এই রুটের ১০ হাজারের বেশি যাত্রী বঞ্চিত হয়েছেন। চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী হয়ে কক্সবাজার রেল লাইন আধুনিকায়ন হয়েছে। এখন ট্রেনে যাত্রীদের চাহিদা বেড়েছে। রেলের রাজস্ব আয় হতো বেশি। সেই সময়ে রেলওয়ে লোকাল ট্রেনটি বন্ধ করে দিয়েছে। শিক্ষক মিন্টু কুমার দাশ বলেন, কক্সবাজার রেল লাইনের সুবাদে চট্টগ্রাম–দোহাজারী রেল লাইন নতুন করে আধুনিকায়ন করা হয়েছে। এখন ট্রেনের যাত্রী বেড়েছে। বসের চেয়ে যোগাযোগ আরামদায়ক হওয়াতে এবং সাশ্রয়ী হওয়াতে মানুষের ট্রেনের প্রতি আগ্রহ বেশি। এখন ট্রেন চালালে রেলওয়ে লাভবান হতো। অথচ রেলওয়ে এই রুটের ২ জোড়া লোকাল ট্রেন একেবারে বন্ধ করে দিয়েছে। এটা আমাদের জন্য দুঃসংবাদ।

রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম–দোহাজারী রুটের মধ্যে স্টেশন রয়েছে ১২টি। স্টেশনগুলো হল ঝাউতলা, ষোলশহর, জানালী হাট, গোমদন্ডি, বেঙ্গুরা, ধলঘাট, পটিয়া, চক্রশালা, খরনা, কাঞ্চননগর, খানহাট ও হাশিমপুর। এ সকল স্টেশন থেকে আগের লোকাল ট্রেনটিতে প্রতিদিন কমপক্ষে ১০ হাজার বেশি যাত্রী যাওয়া–আসা করতো।

গত সাড়ে ৩ বছর ধরে লোকাল ট্রেনটি বন্ধ থাকায় এই রুটে এসব মানুষ রেল সেবা থেকে বঞ্চিত রয়েছে। শুধু দোহাজারী স্টেশন থেকেই প্রতিদিন ৩শ থেকে ৪শ জন যাত্রী যাওয়া আসা করতো।

চন্দনাইশের দোহাজারীর স্থানীয় বাসিন্দা সংবাদ কর্মী আজগর আলী সেলিম বলেন, লোকাল ট্রেনটি দিয়ে আমাদের দোহাজারী থেকে প্রতিদিন ভোরে মত শত মানুষ নিরাপদে চট্টগ্রাম শহরে যেতেন এবং আসতেন। এই রুটে লোকাল ট্রেনগুলো বন্ধ থাকায় ভোগান্তি বেড়েছে।

জানা গেছে, ডেমুগুলো ২০১৪ সালে কেনা হয় ৬৫০ কোটি টাকা দিয়ে। চার দশক সেবা দেওয়ার কথা থাকলেও কেনার পর থেকেই বিকল হতে শুরু করে এগুলো। দীর্ঘদিন পড়ে থাকায় ঘন জঙ্গলে ঢেকে গেছে ট্রেন; জং ধরে ক্ষয়ে পড়ছে মূল্যবান যন্ত্রপাতি। অবহেলা-অযত্নে ট্রেনগুলো এখন স্থায়ীভাবে নষ্টের পথে। কোচ ও ইঞ্জিনসহ গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশগুলোও রক্ষণাবেক্ষণের উদ্যোগ নেই রেলের। পরিত্যক্ত ট্রেনের ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে রেলের ওয়ার্কশপ।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

চট্টগ্রামে  লোকাল রোড়ে বন্ধ হয়ে গেল শতকোটি টাকার লোকাল ডেমু ট্রেন 

আপডেট সময় : ১১:৪২:১৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

 

চট্টগ্রাম–দোহাজারী রুটে লোকাল দুই জোড়া ডেমো ট্রেন অবশেষে বন্ধ হয়ে গেল। এর আগে এ ট্রেনটি ইন্জিন সংকটের অজুহাতে সাড়ে তিন বছর বন্ধ ছিল।একই ভাবে বন্ধ হয়ে গেছে পটিয়া রুটে চলাচলরত ডেমু ট্রেনটিও। এই দুটি ট্রেন আর চলবে না বলে জানিয়েছে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ৫ এপ্রিল থেকে চট্টগ্রাম–দোহাজারী রুটে চলাচলকারী ২ জোড়া যাত্রীবাহী লোকাল ট্রেন বন্ধ হয়। রুটে যাত্রীদের ব্যাপক চাহিদা থাকার পরও প্রথমে ইঞ্জিন সংকটের কারণে লোকাল ট্রেনটি ২০২১ সালের ৫ এপ্রিল বন্ধ করে দেয়া হয়। সাড়ে ৩ বছরের মাথায় এসে ট্রেনটি একেবরেই বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এখন থেকে চট্টগ্রাম–দোহাজারী রুটে আর কোনো লোকাল ট্রেন চলবে না।

অপরদিকে চট্টগ্রাম–পটিয়া রুটের ডেমু ট্রেনটিও একেবারেই বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এখন এই রুটের যাত্রীরা চট্টগ্রাম–কক্সবাজার স্পেশাল ট্রেনে করে যাতায়াত করবে বলে জানান রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের পরিবহন বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। চট্টগ্রাম–কক্সবাজার স্পেশাল ট্রেনটি চট্টগ্রামের পর থেকে প্রতিটি স্টেশনে থামে এবং যাত্রী ওঠা–নামা করা হয়। এই ব্যাপারে রেলওয়ের চট্টগ্রাম স্টেশনের ম্যানেজার মো. মনিরুজ্জামান বলেন, দোহাজারী রুটে আগে একটি লোকাল ট্রেন চলাচল করতো। ট্রেনটি চট্টগ্রাম থেকে সন্ধ্যায় দোহাজারীর উদ্দেশ্যে ছেড়ে যেত এবং পরের দিন সকালে চট্টগ্রাম আসত। একইভাবে পটিয়া রুটে একটি ডেমু ট্রেন চলত। অনেক দিন দোহাজারী লোকাল ট্রেন এবং পটিয়া পর্যন্ত ডেমু ট্রেনটি বন্ধ আছে। দোহাজারী লোকাল ট্রেন আর চলবে না। ডেমুও আর চলবে না।

চট্টগ্রাম–দোহাজারী রুটের বেশ কয়েকজন যাত্রী বলেন, দোহাজারী থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত ১২টি স্টেশনের অন্তত ১০ হাজার যাত্রী রেল সেবা থেকে বঞ্চিত রয়েছে। ২০২১ সালের ৫ এপ্রিল থেকে এ ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এখন শুনছি একেবারেই বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এটা দুঃখজনক।

দোহাজারী রুটের ট্রেনের যাত্রী চন্দনাইশের মাস্টার নুরুল আলম বলেন, চট্টগ্রাম–দোহাজারী রুটে লোকাল ট্রেনটি বন্ধ করে দেয়ায় এই রুটের ১০ হাজারের বেশি যাত্রী বঞ্চিত হয়েছেন। চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী হয়ে কক্সবাজার রেল লাইন আধুনিকায়ন হয়েছে। এখন ট্রেনে যাত্রীদের চাহিদা বেড়েছে। রেলের রাজস্ব আয় হতো বেশি। সেই সময়ে রেলওয়ে লোকাল ট্রেনটি বন্ধ করে দিয়েছে। শিক্ষক মিন্টু কুমার দাশ বলেন, কক্সবাজার রেল লাইনের সুবাদে চট্টগ্রাম–দোহাজারী রেল লাইন নতুন করে আধুনিকায়ন করা হয়েছে। এখন ট্রেনের যাত্রী বেড়েছে। বসের চেয়ে যোগাযোগ আরামদায়ক হওয়াতে এবং সাশ্রয়ী হওয়াতে মানুষের ট্রেনের প্রতি আগ্রহ বেশি। এখন ট্রেন চালালে রেলওয়ে লাভবান হতো। অথচ রেলওয়ে এই রুটের ২ জোড়া লোকাল ট্রেন একেবারে বন্ধ করে দিয়েছে। এটা আমাদের জন্য দুঃসংবাদ।

রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম–দোহাজারী রুটের মধ্যে স্টেশন রয়েছে ১২টি। স্টেশনগুলো হল ঝাউতলা, ষোলশহর, জানালী হাট, গোমদন্ডি, বেঙ্গুরা, ধলঘাট, পটিয়া, চক্রশালা, খরনা, কাঞ্চননগর, খানহাট ও হাশিমপুর। এ সকল স্টেশন থেকে আগের লোকাল ট্রেনটিতে প্রতিদিন কমপক্ষে ১০ হাজার বেশি যাত্রী যাওয়া–আসা করতো।

গত সাড়ে ৩ বছর ধরে লোকাল ট্রেনটি বন্ধ থাকায় এই রুটে এসব মানুষ রেল সেবা থেকে বঞ্চিত রয়েছে। শুধু দোহাজারী স্টেশন থেকেই প্রতিদিন ৩শ থেকে ৪শ জন যাত্রী যাওয়া আসা করতো।

চন্দনাইশের দোহাজারীর স্থানীয় বাসিন্দা সংবাদ কর্মী আজগর আলী সেলিম বলেন, লোকাল ট্রেনটি দিয়ে আমাদের দোহাজারী থেকে প্রতিদিন ভোরে মত শত মানুষ নিরাপদে চট্টগ্রাম শহরে যেতেন এবং আসতেন। এই রুটে লোকাল ট্রেনগুলো বন্ধ থাকায় ভোগান্তি বেড়েছে।

জানা গেছে, ডেমুগুলো ২০১৪ সালে কেনা হয় ৬৫০ কোটি টাকা দিয়ে। চার দশক সেবা দেওয়ার কথা থাকলেও কেনার পর থেকেই বিকল হতে শুরু করে এগুলো। দীর্ঘদিন পড়ে থাকায় ঘন জঙ্গলে ঢেকে গেছে ট্রেন; জং ধরে ক্ষয়ে পড়ছে মূল্যবান যন্ত্রপাতি। অবহেলা-অযত্নে ট্রেনগুলো এখন স্থায়ীভাবে নষ্টের পথে। কোচ ও ইঞ্জিনসহ গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশগুলোও রক্ষণাবেক্ষণের উদ্যোগ নেই রেলের। পরিত্যক্ত ট্রেনের ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে রেলের ওয়ার্কশপ।