ক্ষমতার দাপটে কৃষিমন্ত্রী সরকারি ভূমি বাইক্কাবিল এর পাড় কেটে নিজ ফিসারিতে মাটি ভরাট
- আপডেট সময় : ০৬:৪৩:১৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ৫৬ বার পড়া হয়েছে
ক্ষমতার অপব্যবহার করে কৃষি মন্ত্রী আব্দুল শহীদ এমপি সরকারি ভূমি বাইক্কাবিল এর কান্দি (পাড়) কেটে নিজ ফিসারিতে মাটি ভরাটে অভিযোগ উঠেছে। কৃষিমন্ত্রী থাকাকালিন সময়ে নিজের ক্ষমতার দাপটে বাইক্কাবিল অভয় আশ্রম থেকে নিজ ফিসারিতে মাটি ভরাট করেন।
গত কয়েকদিন থেকে এক্সেভেটর ও ড্রাম ট্রাক ব্যবহার করে কৃষি মন্ত্রীর ব্যক্তিগত মালিকানাধিন ফিসারিতে মাটি ভরাটের কাজ করেন।
তবে এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন, বাইক্কাবিল বড় গাংগিনা সম্পদ ব্যবস্থাপনা কমিটি ও এলাকাবাসী কেউ মুখ খুলে কথা বলতে রাজি নয়।
একটি সূত্র জানায় কৃষি মন্ত্রী কৌশলে বাইক্কাবিল পর্যটন এলাকা ও মাছের অভয় আশ্রম এলাকা খননের জন্য বড়গাঙ্গিনা সম্পদ ব্যবস্থা কমিটির কাছ থেকে একটি আবেদন করান শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে।
সূত্র জানায় ২০১৩ সালে ১০ এপ্রিল আব্দুল শহীদ এমপি সরকার দলীয় হুইপ থাকাকালিন সময়ে তারই ইশারায় বাইক্কাবিল অভয় আশ্রম থেকে মাছ লুট হয়। গ্রামবাসী বিল থেকে ধরে নিয়ে যায় রুই, কাতলা, বোয়াল, চিতল সহ ছোট বড় বিভিন্ন জাতের মা মাছ। ওই সময়ে সরকার দলীয় হুইপ হিসেবে প্রভাব খাটানোর কারনে সরকারি সম্পদ লুটের ব্যপারে কোন মামলাও হয়নি।
উল্লেখ্য এক সময় হাইলহাওরে মাছ বিলুপ্ত হতে থাকলে, সরকার ২০০৩ সালে চাপড়া, মাগুড়া ও যাদুরিয়া বিলের ১০০ একর জলাভূমিতে বাইক্কা বিল নামে একটি স্থায়ী অভয়াশ্রম ঘোষনা করে। এরপর থেকে ধীরে ধীরে বিলটি মাছের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে গড়ে উঠে। পাশাপাশি পাখির নিরাপদ আবাস স্থল হিসেবেও গড়ে উঠে। যে কারণে প্রতি বছর দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শীতের অতিথি পাখি দেখতে আসেন এই বাইক্কা বিলে।
স্থানীয়রা জানান আজ থেকে ৫-৬ মাস আগে কৃষিমন্ত্রী নিজের ফিশারিতে মাটি কেটে ফিশারিতে ভরাট করেন, এগুলো কেউ দেখেনা। ১৩ এপ্রিল এর খননের অজুহাতে বাইক্কা বিলে পাড় কেটে কৃষি মন্ত্রীর লোকজন মাটি কেটে নিয়ে ফিশারির পাড় ভরাট করছেন ।
এক্সেলেটর ডাইভার মোখলেছুর রহমান জানান এক্সেলেটর দিয়ে বাইক্কা বিলে থেকে মাটি কেটে নিয়ে কৃষি মন্ত্রী আব্দুশ শহীদ স্যারের ফিসারি ভরাট করা হচ্ছে।
অভিযোগের ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবু তালেব মুঠেফোনে জানান, বাইক্কা বিল খননের জন্য বড়গাঙ্গিনা সম্পদ ব্যবস্থা কমিটি দরখাস্ত করেছিল,আমি এটা মৎস্য অফিসারকে তদন্ত করতে বলেছি।
অপরদিকে মৌলভীবাজার ৪ আসনের সাবেক কৃষিমন্ত্রী ও চিফ হুইপ আবদুস শহীদের বিরুদ্ধে বন বিভাগের জমি দখল করে চা বাগান করার অভিযোগের তথ্য-প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন। মৌলভীবাজার-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুস শহীদের স্ত্রী ও সন্তানদের নামে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বাড়ি-ফ্ল্যাটের পাশাপাশি কোটি কোটি টাকার সম্পদের তথ্য উঠে এসেছে।
এছাড়াও কানাডার ‘বেগমপাড়ায়’ তার স্ত্রীর একটি বাড়ি কেনার এবং দেশে-বিদেশে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের প্রমাণ পাওয়া গেছে। প্রাথমিক তদন্তে এসব তথ্য উঠে এসেছে বলে রোববার দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আখতারুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
কৃষিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে সম্পদ অর্জন, বিভিন্ন দুর্নীতি ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার এবং নিজের, স্ত্রী ও পরিবারের নামে কোটি কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। দেশে এবং বিদেশে তার মালিকানাধীন বেশ কিছু অবৈধ সম্পদের প্রমাণও মিলেছে। ওই চা বাগানে তিনি সরকারি খরচে সড়কবাতি ও গভীর নলকূপ বসিয়েছেন বলেও জানা গেছে।
দুদক জানায়, আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক কৃষিমন্ত্রী আবদুস শহীদ টানা সাতবার (১৯৯১ থেকে ২০২৪) মৌলভীবাজার-৪ (শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ) সংসদীয় আসন থেকে নৌকা প্রতীকে জয়লাভ করেন। তিনি আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও চিফ হুইপের দায়িত্ব পালন করেন।